সমাজজীবনে তথ্য ও যোগাযােগ প্রযুক্তির প্রভাব
(Inluence of linformation and Conmmunication Technology in social life)
বর্তমান বিশ্ব তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর এক আধুনিক বিশ্বে পরিণত হয়েছে। উন্নত দেশের সমাজব্যবস্থায় তথ্য প্রযুক্তি আজ আভাবনীয় পরিবর্তন এনেছে। সে অনুপাতে উন্নয়নশীল দেশের সমাজব্যবস্থায় এর প্রভাব পড়লেও ব্যাপকতা লাভ করে নি। তবে এটাও ঠিক যে সাম্প্রতিককালে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিবিদ্যা যে তালে দ্রুত এগিয়ে চলছে তার সাথে তত দ্রুত কোন সমাজ ব্যবস্থাই তাল মেলাতে পারছে না। এতে দু'টি বিষয়ের মধ্যে ব্যবধান তৈরি হচ্ছে। অবশ্য ব্যবধান যতই প্রসার লাভ করুক না কেন তথ্য প্রযুক্তির প্রভাব যে সমাজের রূপরেখা পাল্টে দিতে শুরু করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আজকের দিনে তথ্য প্রযুক্তির সাথে জড়িত বিষয় গুলো ছাড়া জীবন অচল। যেকান কাজের জন্য চাই উপাত্ত। টেলিফোন, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট মাধ্যম আজ তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত
করেছে। বিশ্বের যেকোন প্রান্ত থেকে এর ফলে তথ্য আদান-প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। বেতার, টেলিভিশনে ছবিসহ শব্দ
সম্প্রচার করা সম্ভব হচ্ছে যা সমাজের উপর প্রভাব ফেলছে। এ সমস্ত প্রযুক্তিগুলো উদ্ভাবিত হওয়ায় তথ্য নিয়ে কাজ করা টা সহজ হয়ে পড়েছে। আজ সমাজের মানুষ স্বাধীন ও উন্মুক্ত।
স্যাটেলাইট বা কত্রিম উপগ্রহ আজ তথ্যকে মানুষের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। ফাইবার অপটিক ক্যাবল তথ্য উপাত্ত প্রেণর ও গ্রহণে গতিকে করেছে আরও গতিশীল ও বহুমুখী। তথ্য প্রযুক্তির অন্যতম এবং শীর্ষস্থানীয় হাতিয়ার কম্পিউটার রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভৃমিকা। মানুয আজ শত চেষ্টা করলেও অন্যের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারছে না। কম্পিউটার নির্ভর এই বিশ্বে আজ যেকোনো কিছুই প্রতক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কম্পউটার দ্বারা। ফলে সমাজেও স্বাভাবিকভাবে কম্পিউটার তথা তথ্য প্রযুক্তি প্রভাব ফেলছে।
অফিস- আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসাক্ষেত্র, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প, বিনেদন, খেলাধুলা, যাগাযােগব্যবস্থা, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সর্বত্রই ব্যবহৃত হচ্ছে কম্পিউটার বা কম্পিউটার নির্ভর পদ্ধতি। এতে কাজ কর্মে এসেছে গতিশীলতা, স্বচ্ছতা। পুরনো ধ্যান-ধারণা ফেলে দিয়ে মানুষ এখন নতুন প্রয়ুক্তিকে গ্রহণ করছে। সব ধরনের প্রযুক্তির সু্ঠ নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবহার হচ্ছে নিশ্চিত। রেডিও, টেলিভিশন, ভিডিও ইত্যাদির স্থান দখল করেছে মান্টিমিডিয়া। আজকাল ব্যক্তিণত কাজকর্ম, পারিবারিক
যাবতীয় কাজ কর্মে ঘরে ঘরে ব্যবহৃত হচ্ছে কম্পিউটার।
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজেই তার বসবাস । তবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুত্তির বদৌলতে মানুষ এখন ক্ষুদ্র গণ্ডিতে আবদ্ধ সমাজ নয় বরং বিশ্বব্যাপী বিস্তুত বৃহত্তর সমাজের অধিবাসী হয়ে উঠেছে। আর তাই বিশ্বটাকে বলা হচ্ছে 'গ্লোবাল ভিলেজ বা বিশ্বগ্রাম ।
বিভিন্ন ধরনের সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইটের কল্যাণে এখন মানুষ পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকছে। ফেসবুক, টুইটার,মাইস্পেস, লিংকডইন, ডিগ এর মতা আরও অনেক সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইট; ইউটিউব এর মতাে ভিডিও গুগল,শেয়ারিং সাইট; ফ্লিকার এর মতো আরও কিছু ফটো শেয়ারিং সাইট; নানা বিষয়ধর্মী বিভিন্ন ধরনের ব্লগ প্রভৃতি হয়ে উঠেছে।
Bad effect of Information Technology in society
তথ্য প্রযুক্তি মানুষের সামাজিক জীবনে কিছু সুফল নিয়ে এসেছে ঠিক তেমনি সাথে নিয়ে এসেছে কিছু কুফল।
অপরাধপ্রবণতাঃ
স্যাটেলাইটের মধ্যমে এখন বহির্বিশ্বের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল ঘরে বসেই দেখা যাচ্ছে। এগুলোর
মধ্যে হানাহানি, মারামারির মতাে সাংস্কৃতিক উপাদানও রয়েছে যা অন্য দেশের সমাজকেও গ্রভাবিত করছে।
ভায়োলেন্স কম্পিউটার গোমস দেখে শিশুরা ক্রমেই সহিংস হয়ে উঠতে পারে বলে সমাজবিজ্ঞানীদের অনেকেই আশঙ্কা
প্রকাশ করেছেন । এছাড়া ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির মতাে ঘটনাও হরহামেশাই ঘটছে।
অলীলতাঃ ইন্টারনেটে এমন কিছু অসশ্নীল সাইট রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে মানুষের নৈতিক স্খলন ঘটতে পারে। এসব সাইটে অশ্মীল, কুরুচিপূর্ণ এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক অনুপযোগী বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও থাকে যা নৈতিক চরিত্রের অধঃপতন ঘটাতে পারে। এতে সামাজিক অবক্ষয় সৃষ্টির ঝুঁকি রয়েছে।
তথ্যের গােপনীয়তা প্রকাশঃ
তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে এখন প্রযুক্তিগত সুবিধা এতটাই বেড়েছে যে এর অপব্যবহার করে
ব্যক্তি গোপনীয়তা প্রকাশ হয়ে পড়ছে। হ্যাকারের আক্রমণে কম্পিউটারের গুরুত্বূর্ণ তথ্যাদি চুরি হয়ে যাওয়া, মুছে যাওয়া, পাসওয়ার্ড ও ক্রডিট কার্ডের নম্বর চরি হওয়ার মাধ্যমে তথ্যের গোপনীয়তা আর থাকছে না।
বেকারতৃ সৃষ্টিঃ তথ্য প্রয়ুক্তির উপর অধিক নির্ভরশীলতার কারণে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই এখন অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন। তাই এসব ক্ষেত্রে কম মানবসম্পদের প্রয়োজন পড়ায় কর্মী ছাঁটাইয়ের কারণে অনেক সময়েই বেকারত্বের হার বেড়ে যাচ্ছে।
শারীরিক সমস্যাঃ
টেলিভিশন, ইন্টারনেট বা কণ্পিউটার ব্যবহারকারী সারাক্ষণ মনিটরের দিকে তার দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখেন।
একনাগাড়ে কম্পিউটারে কাজ করার মাধ্যমে কোমর, হাত, কজিতে ব্যথা ভিডিও গেমের মাধ্যমে শিশুদের মানাসিক
আসক্তি, আধিকক্ষণ মোাবাইল ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে হদপিও, কান ও মস্তিঙ্ধে নানা ধরনের অসুথ হতে পারে ।
বুদ্ধিমত্তার ক্ষতিগ্রস্থতা : তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে মৌলিক গবেষণা থেকে মানুষ দূরে থাকবে। এই প্রযুক্তি
ব্যবহারের ফলে প্রায় সব ধরনের সমস্যার সমাধান সহজে পাওয়ার কারণে চিন্তা ও গবেষণার মাধ্যমে নতুন কিছু অবিষ্কার
হতে দরে থাকবে। ফলে আমাদের সমাজ ও জাতি মেধাবী প্রজন্ম হতে বঞ্চিত হবে।
মিথ্যা প্রচারণাঃ
তথ্য প্রযৃুক্তি ব্যবহার করে সহজেই মিথ্যা প্রচারণা করা যায়। ফেসবুক, ওয়েবসাইট, ব্লগ সাইটে কারাে ব্যক্তিগত তথ্য ছবি, সংবাদ এডিট করে মিথ্যা ছবি বা তথ্য প্রকাশ করে সামা্জিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন বা মানহানী করা যায়। এসব ভয়াবহ দাঙ্গা, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও দেশের সার্বভৌমত্বের হুমকি, রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়।
ডিজিটাল ডিভাইডঃ তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ সুবিধা ভােগকারী এবং এসব সুযোগ হতে বথ্চিত কিংবা কম সুবিধা ভােগকারী লোকদের মধ্যকার ব্যবধানই হলাে ডিজিটাল ডিভাইডস। উন্নত দেশগুলো সর্বাধুনিক সব ডিভিটাল
প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। অপরদিকে উন্নুয়নশীল দেশগুলোে অনেক ক্ষেত্র সেসব সুবিধা পায় না কিংবা তাদের ব্যবহৃত প্রযুক্তিগুলো পুরনো। এর ফলে বিশ্বায়নের যুগে পৃথিবীর দুই প্রান্তে বসবাসকারী লোকজনের মধ্যে এক বিশাল ব্যবধান তৈরি হচ্ছে।
Negative Influence of VR in everyday life
ইতিবাচক প্রভাবের পাশাপাশি ভার্চুয়াল রিয়েলিটির নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো,
সবাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারকঃ
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এর ব্যবহার মানুষের জন্য ক্ষতিকারক। এটি মানুষের দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তির ক্ষতিসাধন করে।
কল্পনার জগতে বিচরণঃ
ভার্চয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে মানুষ তার কল্পনার রাজ্যে ইচ্ছেমতাে বিচরণ করতে পারবে। অনেক সময় ধরে কল্পনার
জগতে থাকে তাহলে বাস্তবতা থেকে আস্তে আস্তে দৃরে সরে যাবে। ফলে পৃথিবীতে বিপর্য় নেমে অসবে।
মনুষ্যতুহীনতাঃ
ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে মানুষ বাস্তবিকের চেয়ে ভাল পরিবেশ ও মনের মতাে সঙ্গী পাবে। ভার্চয়াল রিয়েলিটির ব্যাপক
সারের কারণে মানুষের পারস্পরিক ত্রিয়া হাস পাবে এবং মনৃষ্যত্হীনতা বেড়ে যাবে। ফলে ক্রমেই মানব সমা্জ বিলুপ্ত হতে থাকবে।